স্পেনের পর ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় বেলজিয়ামও

স্পেনের পর ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় বেলজিয়ামও

ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বেলজিয়ামের উপ-প্রধানমন্ত্রী পেট্রা ডি সাটার। এসময় বেলজিয়াম সরকারকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজার হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে এমন দাবি জানিয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন।

বুধবার বেলজিয়ামের উপপ্রধানমন্ত্রী পেত্রা ডি সাটার বলেন, ‘এখনই ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময়। ইসরায়েল গাজায় যে বোমা বৃষ্টি চালাচ্ছে তা অমানবিক। এটা স্পষ্ট যে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক দাবিকে পাত্তা দেয় না। যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ীদের ইইউ থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত।’

এদিকে, কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পেনের সামাজিক অধিকার বিষয়ক মন্ত্রী এবং পোডেমোস পার্টির নেতা আইওন বেলারা ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় তিনি গাজায় ফিলিস্তিনিদের “পরিকল্পিত গণহত্যা” এর জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেন।

বিশ্ব নেতাদের দ্বৈতনীতির নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করা হয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলি বোমা হামলার বিষয়ে “নীরবতা” পালন করছে বিশ্ব। ইসরায়েলি রাষ্ট্রকে অবশ্যই ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই পরিকল্পিত গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।’

এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা অন্যান্য সংঘাতে মানবাধিকারের বার্তা দিতে পারি কিন্তু এখানে কেন দিতে পারি না। এখানে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। মায়ের সামনে সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে। মা মরিয়া হয়ে চিৎকার করছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। এই ভয়ংকার দৃশ্য কি বিশ্ব দেখছে না?’

এদিকে, গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। স্থল অভিযানের পাশাপাশি চলছে বিমান ও নৌ পথে হামলা। তেল আবিবের স্থল অভিযান প্রতিরোধে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবি করেছে হামাস। গাজার বীচ শরণার্থী শিবির ও বেইট হানাউন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংসের কথা জানায় সশস্ত্রগোষ্ঠীটি। স্থল অভিযান চালিয়ে গাজা শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গেছে ইসরায়েলি সেনারা। লক্ষ্য হামাসের সুবিশাল সুড়ঙ্গ শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করা। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী স্থল, বিমান ও নৌ সেনাদের সমন্বয়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে গাজা শহরে হামলা চালাচ্ছে বলে জানান ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত।

বুধবার ভোরে গাজার মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে আবারও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ঘটে হতাহতের ঘটনা। ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে অনেকে। বোমা হামালা হয়েছে আল-শিফা ও ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের আশপাশেও।

এদিকে, গাজায় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী বহনকারী দুটি ট্রাক ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে রেড ক্রস।

গাজায় হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের হাতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় আছে বলে সতর্ক করেছেন সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে দ্রুত জনমত গড়ে উঠছে বলে জানান তিনি।

গাজা সংঘাত নিয়ে আলোচনায় এই সপ্তাহে সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। আরব, ইসলামিক এবং আফ্রিকার দেশগুলো নিয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সৌদির বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১৬০ শিশু নিহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গাজাবাসী যে মৃত্যু ও আর দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তার ভয়াবহতা অনুধাবন করাও কঠিন বলে জানায় সংস্থাটি।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৬৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ২১৪ জন ফিলিস্তিনি। ৪ হাজার ৩২৪ জন শিশু, ২ হাজার ৮২৩ জন নারী নিহত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪৭৫ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ২ হাজার ৫৫০ জন। যাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ জন শিশু।

More News...

সরাসরি বিতর্কে মুখোমুখি হবেন বাইডেন-ট্রাম্প

গাজায় নিহতদের ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু: জাতিসংঘ