প্রশাসন নিয়েই এগুচ্ছে কমিশন

প্রশাসন নিয়েই এগুচ্ছে কমিশন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য করতে প্রশাসন নির্ভরতা কমিয়ে আনার দিকে ঝুঁকেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে লক্ষ্যে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়োগ না দিয়ে নিজস্ব লোকবল দিয়ে ভোট পরিচালনার কাজটি করতে চেয়েছিল নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশ্লেষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ইসির এই মনোভাবকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, ভোটে সরকার কিংবা সরকারি দলের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ এতে রোধ হবে, কমিশনও পৌঁছাতে পারবে আস্থার জায়গায়। কিন্তু ভোটের পাঁচ মাস আগেই সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি। এছাড়া ভোটকেন্দ্র স্থাপনে পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব অর্পণ ইসির নিরপেক্ষতার বিষয়টিকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রশাসন নির্ভরতা কমিয়ে আনার উদ্যোগটি বেশ প্রশংসনীয় ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এমন কি হলো- যে কারণে পিছু হটতে হচ্ছে কমিশনকে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সকল পদে দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে ইসির। নিজেদের সেই ক্ষমতা খর্ব করে প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল হওয়া কোনোভাবেই সমীচীন হচ্ছে না। এতে বিশেষ একটি শ্রেণির পক্ষে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। যা ভোটের পরিবেশ অনুক‚ল রাখার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে জেলা প্রশাসকরাই প্রাধান্য পাবেন- এমন ইঙ্গিত দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা না বললেও তা নাকচও করেননি। জেলা প্রশাসক বা বিভাগীয় কমিশনাররাই কেবল রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন, নাকি ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাও থাকবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি কারা থাকবে বা না থাকবে। এখনো কোনো আলোচনাই করিনি। যখন আলোচনা করব তখন সিদ্ধান্ত নেব, তখন জেনে যাবেন।

এরআগে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ঢেলে সাজাতে কেন্দ্রের স্থান নির্ধারণে পুলিশ ও প্রশাসনকে যুক্ত করে নতুন নীতিমালা অনুমোদন দেয় ইসি। যদিও এতদিন ভোটকেন্দ্র স্থাপনের স্থান এককভাবে ইসি নির্ধারণ করতো। নতুন নীতিমালায় ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে গঠিত কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা পান জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশ সুপার, শিক্ষা কর্মকর্তা, থানার অফিসার ইনচার্জ ও মহানগরের ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি। জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিটি। এতে সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সদস্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আর জেলা পর্যায়ে ডিসির নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি এই দায়িত্ব পালন করছে।

মহানগর বা জেলায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন কমিটিতে সদস্য সচিব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সদস্য বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। উপজেলা কমিটির তৈরি করা ভোটকেন্দ্রের প্রস্তাবিত তালিকা মহানগর বা জেলা কমিটিতে পাঠাতে হবে। এই কমিটি ভোটকেন্দ্র সরেজমিন তদন্ত করে মতামত দেবে। এই মতামতসহ খসড়া তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এরপর চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

ইসি সংশ্লিষ্টদের মতে, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নানা কার্যক্রমে মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। তাই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজ অধিকতর সহজ।

ইসির উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত আগে ভোটকেন্দ্র নির্বাচনের কাজটি ইসি একাই করতো। নতুন নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা ও শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক দায়িত্বে সরকারের যে সংস্থাগুলো কাজ করে তাদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের কথাই বলা হয়েছে নতুন নীতিমালায়। যাতে কেউ প্রভাবিত হয়ে ইচ্ছামাফিক কোথাও ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে না পারে।

নির্বাচন কমিশন ?সূত্রে জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় গড়ে ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র, গড়ে ৫০০ জন পুরুষ ও ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য ইভিমে ভোটগ্রহণে পুরুষ ভোটারের জন্য ৪০০ ও নারীর জন্য ৩৫০ জনে একটি করে ভোটকক্ষ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এতে যাতায়াতের সুবিধা, দুটি কেন্দ্রের মধ্যে ৩ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব না হওয়া এবং একটি কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি অন্য কেন্দ্র স্থাপন না করার কথাও বলা হয়। কেন্দ্র স্থাপনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। এতে বিগত নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে গোলযোগ বা নির্বাচনী পরিবেশ বিঘি্নত হয়েছে বা বর্তমানে কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রভাব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব স্থাপনায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।

বিগত নির্বাচনে ব্যবহৃত কেন্দ্রগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হলে বা পর্যাপ্ত সংখ্যক কক্ষ বা যাতায়াত সুবিধা না থাকলে, অপেক্ষাকৃত উপযুক্ত স্থাপনায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ বা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা উল্লেখ করা হয়। বিগত নির্বাচনে ব্যবহৃত কোনো স্থাপনা নদীভাঙন বা অন্য কোনো কারণে বিলুপ্ত বা ব্যবহার অনুপযোগী হলে, ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, গণমান্য ব্যক্তিবর্গ বা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন স্থাপনায় কেন্দ্র স্থাপন করার প্রস্তাব করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কেন্দ্র স্থাপনে সরকারি ভবনকে প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও অন্যান্য অফিস ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে।

More News...

বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় ৬০০ যানবাহনে ভাঙচুর ও ১৩ জন নিহত: প্রধানমন্ত্রী

শাহজাহান ওমর বিএনপি ছাড়ার কারণ জানালেন শাহজাহান ওমর বিএনপি ছাড়ার কারণ জানালেন