আসন্ন রমজান মাসে চালের দাম না বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন চালকল মালিক (মিলার) ও ব্যবসায়ীরা।
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এক মতবিনিময় সভায় মিল মালিক ও আড়তদাররা এ আশ্বাস দেন। খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সভায় নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নীরদবরণ সাহা চন্দন বলেন, ‘রমজানে চালের মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। বরং সামনে দাম আরও কমতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মিল মালিকদের এখন প্রতি মণ চালে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমদানি খুলে রাখাই এর কারণ।’
মিল মালিক নয়, ধান-চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয় এমন লোকজন ধান ও চাল মজুত করছেন দাবি করে নীরদবরণ সাহা চন্দন বলেন, এরাই মূলত সমস্যা তৈরি করছেন। বাজারটাকে টেনে উপরে তুলছে (দাম বাড়াচ্ছে)। এটা ঠেকানো না গেলে চালের বাজার স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘মিলারদের কাছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে। বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হলে দাম আরও কমে যাবে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, সরকার সবসময় চিন্তা করবে ভোক্তাকে কীভাবে সস্তা খাওয়াবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মিল মালিকদের কথা একবারও চিন্তা করা হয়নি। বাইরে থেকে চাল আমদানি করার ফলে শত শত মিলের কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এটা বোধহয় একটু বেশি বেশি ভাবা দরকার ছিল। ঢালাও চাল আমদানির কারণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক মাস ধরে মন্ত্রীর এলাকা নওগাঁতে ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ আছে। অনেক মিল ব্যাংকের দায়ভারে জর্জরিত।
তিনি বলেন, ‘সামনে যে সিজন (বোরো মৌসুম) আসছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি চালু না হয় এতে বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাদ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো সিজনের আগে ব্যাংকগুলো যাতে অর্থ সহযোগিতা চালু রাখে। এ ভরা মৌসুমে মিল মালিকরা লোকসান করেই যাচ্ছে।’
‘আমন ধান ও চালের বেশিরভাগই কৃষক ও মিলারদের ঘরে রয়েছে। সামনে বোরো মৌসুম। আবহাওয়া ভালো থাকলে উৎপাদন ভালো হবে। এতে চালের বাজার আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’
সরকারি ধান-চাল কেনার সময় ধানের দামের সঙ্গে চালের দামের সমন্বয় করা হয় না দাবি করে আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সেই সমন্বয় থাকলে সরকারের সংগ্রহের চালের দাম এত কম হওয়ার কথা নয়। বোরোতে এ বিষয়টি যাতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘মিলগুলো যাতে টিকে থাকতে পারে, খাদ্য মন্ত্রণালয়কে সেই দিকে নজর দিতে হবে। আমরা মিল মালিকরা এদেশের সন্তান। আমরা শুধু টাকা আয় করবো- শুধু সেই চিন্তাই নেই। মানুষ চিরস্থায়ী নয়, তাকে মরতে হবে। সেটা মনে ধারণ করে যাতে সাধারণ মানুষকে আমরা কষ্ট না দেই। চালের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। ইনশাআল্লাহ চালের বাজার আর বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবো।’
অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান বলেন, ‘চালের দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। সামনে নতুন চাল আসছে। তাই বাজার আর অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো আশঙ্কা দেখছি না।’
সরকারকে সারা বছর বাজার মনিটরিংয়ের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কী করছি না করছি সেটা সরকারের নজরে থাকুক।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন। এতে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকারসহ চাল ব্যবসায়ী নেতা ও মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।