কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আমরা এর বিচার করতে বদ্ধপরিকর। আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের সংস্কারকাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যে ভবনটিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছিল, সেই ভবনটি পুরনো হাইকোর্ট ভবন নামে পরিচিত।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে এই ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সে বিচার চলার মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বছর দেড়েক আগে শত বছরের পুরনো এই ভবন থেকে ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেয়। পুরনো এই ভবনের পাশেই টিনশেডের স্থাপনা তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হয় ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশন। এর পর থেকে নতুন স্থাপনায়ই চলছিল ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুরনো হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। পূর্ত মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয় ভবনটির সংস্কারকাজের। গত ৮ অক্টোবর সংস্কারকাজ শুরু হয়। ২১ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
এর জন্য ২২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন গণপূর্তের এক প্রকৌশলী।
মঙ্গলবার এই সংস্কারকাজ পরিদর্শনে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের আসিফ নজরুল বলেন, ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ হবে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকার ছাত্র-তরুণ জনতার ওপর গুলি চালিয়েছিল। এখনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দিন দিন মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। হাজার হাজার মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন, অনেকে চিরদিনের জন্য বিকলাঙ্গ হয়ে গেছেন। বাংলাদেশে কেন- এই উপমহাদেশের ইতিহাসে শান্তিকালীন সময়ে এত বড় গণহত্যার নজির কোথাও নাই। এমনকি পৃথিবীতেও এটা খুব বিরল বলা যায়। এত বড় একটি গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের নেতৃত্বে এবং ওনার সক্রিয় পদক্ষেপে অতি দ্রুত এই ভবনের সংস্কার ও মেরামতকাজ আমরা সম্পন্ন করছি। আমরা আশা করছি এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে এই ট্রাইব্যুনালে ঐতিহাসিক বিচারকাজ শুরু হবে। আমরা এই বিচার করতে বদ্ধপরিকর। আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাই-আগস্ট মাসে যে অসীম আত্মত্যাগ এই ছাত্র-জনতা করেছে, তার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবশ্যই এই বিচার এখানে হবে এবং এটা খুব দ্রুত শুরু হবে। প্রসিকিউশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। আমরা এটুকু বলতে চাই, বিচার হবে, তবে সেটা সুবিচার।’
এদিকে সোমবার রাতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মঙ্গলবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে যোগ দেন। পরে তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলামসহ অন্য প্রসিকিউটররা। বৃহস্পতিবার থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।