দেশি পর্যবেক্ষকেই আস্থা রাখতে চায় ইসি

দেশি পর্যবেক্ষকেই আস্থা রাখতে চায় ইসি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বজনগ্রাহ্য করতে গণমাধ্যমের পাশাপাশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগ্রহের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হলেও নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি ভরসা রাখতে চায় দেশিয় সংস্থাগুলোর ওপরই। এ জন্য নতুন করে আবারও পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সেলক্ষ্যে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করতে যাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হতে পারে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, কোনো দেশি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে ইসির কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য ইসি আগে আবেদন আহŸান করেছিল। গত ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ১৯৯টি সংস্থা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। পরে আরও ১১টি আবেদন আসে। মোট ২১০টি আবেদনের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৬৮টি সংস্থাকে নিবন্ধনযোগ্য হিসেবে নির্বাচিত করে ইসি।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৬৮টি সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে জানাতে বলেছিল কমিশন। নির্ধারিত সময়ে দুটি সংস্থার বিষয়ে আপত্তি আসে। এই আপত্তি নিয়ে শুনানি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। বাকি ৬৬টি সংস্থা নিবন্ধন পাবে, তা মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে ইসি মনে করছে, আগের তুলনায় এবার দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অনেক কম। তাই এই সংখ্যা বাড়াতে আবার আবেদন আহ্বান প্রয়োজন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনাররা আলোচনা করেছেন। দুয়েক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবীব খান বলেন, বর্তমান কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে সব সময়ই আন্তরিক। এ কারণে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কমিশন চায়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যবেক্ষক আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকুক। স্বচ্ছতা ও জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য এটি প্রয়োজন। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত নিবন্ধনযোগ্য স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা আগের তুলনায় কম। তাই এই সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করে কমিশন।

ইসি সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ছিলেন ৮১টি দেশীয় সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পদ্ধতি চালু করা হয়। বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে সংযোজন করা হয়। ইসি একটি স্থানীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালাও তৈরি করে। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ১৩৮টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। এর মধ্যে ৭৫টি সংস্থার ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন পর্যবেক্ষক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তবে এর আগেও দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেতেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় ৬৯টি সংস্থার ২ লাখ ১৮ হাজার পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

ইসির তথ্যমতে, পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হবে, তার মধ্যে রয়েছে সংস্থাকে দেশের কোনো আইনের অধীন নিবন্ধিত হতে হবে। সংস্থাকে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ হতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, আছেন বা কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, এমন কোনো ব্যক্তি সংস্থার প্রধান নির্বাহী বা পরিচালনা পর্ষদে বা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হয়ে থাকলে সে সংস্থাকে নিবন্ধন দেয়া হবে না।

সেমিনারধর্মী আলোচনার উদ্যোগ: এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার সেমিনারধর্মী আলোচনার আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন ভবনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মোট পাঁচটি ধাপে এই আলোচনার আয়োজনের চিন্তা আছে ইসির। তবে প্রথম আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পরবর্তী ধাপের আলোচনাগুলোর আয়োজন করা হবে কি না।

ইসি সূত্র জানায়, ১৩ সেপ্টেম্বর আলোচনা হবে ‘আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ বিষয়ে। এটি হবে অনেকটা সেমিনারের মতো। সেখানে আট ব্যক্তিকে আলোচক হিসেবে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

আর অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ২০ থেকে ২৫ জন। আলোচনার শেষে একটি উন্মুক্ত সেশন থাকবে। আলোচক হিসেবে অংশ নেয়ার জন্য ইসি যে আটজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আছেন। তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিভিন্ন টক শোতে অংশ নেন এবং পত্রিকায় কলাম লেখেন।

আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। সংবিধানে জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ, ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে।

More News...

দেশবাসী ও সমর্থকদের সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান

জনগণের নির্বাচিত সরকার না হলে কোনো খাতে সংস্কার সম্ভব নয়: তারেক রহমান